বাক্ ১০৭ : ওবায়েদ আকাশ



অভিনেতা তীর্থঙ্কর

তীর্থঙ্কর মজুমদার আমাদের বাড়ির ছেলে
তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেহারাটা দর্জিখানায় সেলাই হচ্ছে
চিবুকের প্রশ্রয় থেকে একগুচ্ছ চুল নাভির ওপর দোল খাচ্ছে

সকাল থেকে একটি কাঠকয়লার বাস এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে আঙিনায়
তাতে বসন্তকাল, কোকিলের ডাক
সারাদিন চড়ে বেড়াচ্ছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত

তীর্থঙ্কর, অভিনয়ের প্রাক-ভূমিকায়
তার গোফের ওপর বসিয়ে দিল নার্সারিতাতে যা লাভ হলো :
ফুটে থাকা দুচারটি ফুলে আবশ্যক পারফিউমের কাজটি অন্তত হয়ে গেল

আর এখন তাতে ফল ধরবে  যা পেড়ে খেতে
তীর্থঙ্করের সস্নেহ আশীর্বাদ প্রয়োজন পড়বে তোমাদের



একটি সাম্প্রতিক কবিতার খসড়া

গত শরতের দিকে
যথার্থই ভাল লোক বলে তোমাদের নিমন্ত্রণ পেলাম
হাঁড়ি-কলসির নিদ্রিত সাজানো ফটকে
তোমাদের অভ্যর্থনা পায়ে পড়ে গেল
বলা হলো­—
জাহাজ ছুটছে
              ঢোল বাজছে
রুটিতেই আপনার প্রচণ্ড আসক্তি, তাই তো?
বললাম, ‘না
তাহলে ভেতরে ঢুকুন
জানেন তো, কেরোসিনের ফলন ভাল
এ নিয়েই দুটো কথা বলা হোক

দেখছ যে, সিঁদুর রাঙানো ষাঁড়
ও থেকে আমরা রোজ কেরোসিন দুহাই
                কেরোসিন খাই...

ট্রেন এসে যাচ্ছে, আমার শ্যাম্পুর পাতা?
এ সবই মায়ের জন্য উপহার
মা বলেন, ‘খ্যাতি নেই খাদ্য নেই
               পারফিউমের গন্ধে আমার
               উঁটকি আসে বাবা

যা দিনকাল, আপনারা সরুন তো
সুঘ্রাণ আসছে
              সুঘ্রাণের জন্মদিন ছিল
              আমার নেমন্তন্ন ছিল
              সংবর্ধনা পায়ে পড়েছিল...

খাতায় মার্জিন টানুন... আমাদের ছবির মাপ নিন
আমার মায়ের নাম    : কেওড়াজল
বাবা             : গন্ধবণিক
পেশা             : দিগ্বিজয়
এভাবে ক্যাপশন দিন

...চলুন কাস্টমসের দিকে
সঙ্গে হোমিওপ্যাথ
বাবা ডাক্তার ছিলেন
ভাল মেয়ে দেখতে পারেন

স্যার, আমার ফাইলপত্রে
এক ডজন সুন্দরী বেড়াতে এসেছেন
গায়ে ডেটলের ঘ্রাণ, লাইকলি ইমিগ্রান্ট
ভাগ্যটা খুলে নিন স্যার

দ্রুত ফিরে চলুন, বাংলার টিচার
রোল-কল হবে
                নো লেট-মার্ক
টিচার, আপনার ছাত্রীদের ডাকে ধর্মঘট
কাল আসবো না
বাসায় বেড়াতে যাবো, থাকবেন টিচার?
সঙ্গে সংবর্ধনা
               সুঘ্রাণ
                    বাবা-মা থাকবেন

আফিমের ঘ্রাণ পাচ্ছ?
দোতলার ছাদে আফিমের চাষ হয় খুব
ডবলডেকারে ওঠে
                    স্কুলে যায়
ভাল শিস্ দেয় মিনি স্কাট
ছাদে রোদ এলে পত্ পত্ ওড়ে পাজামার ফিতে

আর মনে পড়ে পঙ্কজ উদাস
হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া
জলতরঙ্গ...
          বিটোফেন...
                    মোৎসার্ট...
বেলা বোস তুমি শুনতে পাচ্ছ কি?’
ডব্লিউ ডব্লিউ ডট অঞ্জন দত্ত ডট...
আহা প্রতুল-দা আলু ছোলা বেচে উজাড় করেছেন

কফি হাউসের রোদে
ফোলা ফোলা গাল বসে থাকে
মরুভূমির নাভি
                ধারী ধারী পাছা

কাল আপনাকে দেবদাস ছবিতে দেখেছি
সংবর্ধনাকে ভাল চিনবার কথা আপনার
         ইয়েস অনলি শি ইজ!
চলুন মার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আসি

এত হাসি হাসি কথা কী করে বলেন?
আপনার বোগলের ঘ্রাণে বমি বমি লাগে
কোলে তুলে নিন, ওজনে পাতলা
                     ভাল স্বাস্থ্য
                            একহারা
পছন্দ : এ্যাশ টি শার্ট
             ব্ল্যাক জিন্স
                  হানড্রেড পাইপারস
                     প্রিন্স ইগোর
                           এ্যাবস্যুলুট
                                 হোয়াইট মিশ্চেল
জ্যাক ড্যানিয়েল...
        আর
টোল পড়া গাল

একটি রং নাম্বার ডায়াল, হাসপাতাল!
রিয়েলি লোনলি ডাক্তার
পেইন কিলার, প্লিজ...

সিস্টার [নার্স] আপনার ফ্রকের হুকগুলো খুলে যাচ্ছে কেন?
ম্যাডাম [ডাক্তার] আপনার এ্যাপ্রোনটি ভীষণ উড়ছে বাতাসে
আমার চশমাটা খুলুন
মাইনাস থ্রী পয়েন্ট ফাইভ [৩.৫]
পূর্পুরুষের ছিল
চশমাটা ভেঙে দিন, আপনার শুশ্রূষা
                    বড় প্রয়োজন
আরও শীঘ্র ভাল করে দিন
মা বকবেন
তিনি তো অফিস যান না কতদিন

সকাল সকাল শেভ হয়ে যাচ্ছে
ধোঁয়া উঠছে চায়ে
(মধ্য দুপুর... জলপাই-রং জীপ... হ্যান্ডকাপ...)
অভিযোগ :            ক. রঙধনু দেখা
              খ. দেদার গঙ্গার প্রবাহ অঙ্কন
              গ. শীতবস্ত্রহীন
              ঘ. বুকপকেটে প্রেমিকার চুম্বনের ছাপ
              ঙ. প্রেসক্রিপশন
              চ. শালপাতার বিড়ি

আমাকে গেট অব্দি পৌঁছে দিন
                    যাবজ্জীবন, সশ্রম...

প্রিয় শোক :     ১. জীবনানন্দ দাশ
                      ২. সমুদ্র ভ্রমণের দিনগুলি

বালাগাল উলাবে কামালিহি...
আপনাকে খুব সুফি সুফি লাগে
আপনি হারামির মতো মুখ ভার করে হাসেন
আপনি খুব পর্নো পড়েন
কিছুটা ঘুমিয়ে নিন
আপনার কিছু ঘুমের প্রয়োজন আছে
ঘুমের মধ্যে আপনি খুব মন খারাপ করেন

কেউ ফুটপাত ধরে হাঁটছে
যাবজ্জীবন ঘুমের কথা আপনার মনে পড়ছে না তো!



মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প

বারান্দায় সিঁদ কেটে চুরি হয়ে গেছে আমার প্রিয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্পের বইটিতাতে আমার কোনো হাত নেইকেননা, এ বইয়ের একটি গল্পও যখন পড়া ছিল না, তখন একদিন হারানের নাতজামাই ছোটবকুলপুরের যাত্রীদের কাছে নিয়ে এসেছিল কতগুলো উলঙ্গ টিকটিকির ছানাআমি তাদের ছোটোখাটো লেজগুলো ঝরে পড়তে দেখি; দেখি তাদের বিপন্ন নাচানাচি; যারা হাসছে, কাঁদছে আবার এই মতো বিচ্ছিন্নতায় ক্ষুধার জন্য মিছিলে যাচ্ছে, বিপ্লব করছে... আর সুরক্ষিত এলাকা থেকে তাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নিয়মিত ঠ্যাঙারে বাহিনী; আমাদের প্রিয় মানিক দা তার কোনো প্রাক-গল্পের ভূমিকায় এ সংক্রান্তে কতদূর কী লিখেছেন, ভেবেছেন  সে সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না কোনো 



হালখাতা

সুদীর্ঘ বর্ষায় দেখো
           তোমার মাথার নিচে গজিয়েছে শামুকের চারা
তারা সব ঝুলে ঝুলে
           বেবাক নিয়েছে বুঝে চুলের ব্যাপার

আমি এক মৃত নগরের শব
            কাঁধে করে নিয়ে যাই পারস্য নগরে
যেতে যেতে কেউ দেখে, হালখাতা এসে গেছে
আমারও রয়েছে কিছু কারবারি দেনা
শবখানা নড়েচড়ে দেখে
           পারস্য নগরে কিছু গজিয়েছে মাঠ
কেউ তার বোঝে না ব্যাপার

তোমার মাথার নিচে ছোটবড় শামুকের চারা
তারা সব প্রাচীন শহরে এসে
            খুলে খুলে জলে নেমে যায়

হালখাতা এসে গেছে, এমন বিস্তৃত মাঠে
                   শবখানা ভাসাও ডোবাও  




কৃষককন্যার কাব্যচর্চা

এক কৃষকের মেয়েকিশোরী সেস্কুলে যায়লোকজন বলেপ্রতিটি সকালেনা যদি সূ্রয ওঠেএকমুঠো কাঠের আগুনেপৃথিবী কি আলোকিত হয়?

প্রতিবেশী আমিএমনই কিশোরী সেরাত করে ছড়া-পদ্য লেখেকেবলই আমাকে চেনেআর ভাবে মনে মনেএকদিন তুমিও কিশোরপ্রেমপদ্য লিখে শেষেছুড়েছো আগুনেআমি তার পদ্য ঘেঁটে পাইরূপের আগুনে তারপতঙ্গেরা পুড়ে পুড়েকত হলো ছাইআরো লেখে মেয়েঅন্যত্র তুষের আগুনকৃষক পিতাকে তারআজন্ম জ্বালিয়েছেতারো চেদ্বিগুণআমি তাকে বলিরূপের সীমানা যদিখেয়ে যায় ঘুণেছড়া-পদ্য লিখে মেয়েতুমিও ছুড়বে আগুনে

আমার রচনাবলিচারিদিকে বারুদের ঘ্রাণেএকদিন জেনো তারাগড়াবে ধুলায়আর তুমি কৃষককন্যাএকমুঠো কাঠের আগুনপ্রতিদিন দেখা হবেতারায় তারায়


                                                (চিত্রঋণ : পাবলো পিকাসো)

2 comments:

  1. বেশ বেশ বেশ বেশ বে-এ-এ-এ-শ

    ReplyDelete
  2. চমৎকার! Baak-এ আরও লিখুন কবি ওবায়েদ অকাশ প্রত্যাশা করি।

    ReplyDelete